অন্তর রায় প্রিন্স, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : মামা-খালু আর টাকার জোর না থাকলে পুলিশে চাকুরী পাওয়া যায় না -এমন ধারণাকে পাল্টে দিয়ে কেবল মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১০৩ টাকা ব্যয় করে ঠাকুরগাঁও জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অতিদরিদ্র পরিবারের ৩৮ জন ছেলে ও মেয়ে এবার পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান (পিপিএম-সেবা) এর প্রশসংনীয় এবং ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণেই অবিশ্বাস্য এই নিয়োগ সম্ভব হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ঘুষ না দিয়ে শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশের চাকরি পাওয়া যায় এ কথাটি ঠাকুরগাঁওয়ে এখন প্রমাণিত সত্য।
জানা গেছে, পুলিশের চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৮ জন অতিদরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। কেউ বাবা-মাহারা এতিম, আবার কেউ এসেছে অতিদরিদ্র কৃষক, স্কুল শিক্ষক, দর্জি, দিনমজুর, বর্গাচাষী, শ্রমজীবী, গৃহ পরিচারিকার কাজ করে এমন পরিবার থেকে।
এমনকি চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যাদের পরিবারে দু-বেলায় দু-মুঠো খাবারের সংস্থানও নেই। এ ছাড়া এদের মধ্যে রয়েছে দরিদ্র উপজাতি, মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য সন্তান, নাতি, নাতনি এবং দরিদ্র যোগ্য পুলিশের পোষ্যরাও রয়েছে। চাকরি পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এভাবে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় তা কখনো তারা কল্পনাও করতে পারেননি। ফলাফলে নিজেদের নাম দেখে এবং পরবর্তীতে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাড়ীতে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে অনেকেই আনন্দে-কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান এর জন্য দোয়া করেন। এছাড়াও তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান (পিপিএম-সেবা) বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে ঠাকুরগাঁওয়ে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করেই এ জেলার ৩৮ জন তরুণ-তরুণী পুলিশের চাকরি পেল। ’ ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ঢাকদহ গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মো: ফয়সাল আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, তার মেয়ে মোছাঃ সুফিয়া যে পুলিশে চাকরী পাবে তা তারা জীবণে কল্পনাও করেনি।কিন্তু থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ এসে যখন তার মেয়ের পুলিশে চাকুরী হওয়াতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে মিষ্টি উপহার নিয়ে বাসায় আসেন তখন তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।এ যুগেও যে বিনা টাকায় পুলিশে চাকুরী হয় তা তার মেয়ের চাকুরী না হলে কোনদিন বিশ্বাসই করতে পারতেন না।এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ পুলিশ সুপারের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিনারায়নপুর কাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক মো: রেজাউল মেয়ে মোছাঃ রোজিনা আক্তারের মুখে পুলিশে চাকুরী হওয়ার কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করেননি।পরে ফুলহাতে নিয়ে বাসায় যখন পুলিশ আসে তখন তিনি বিশ্বাস করেন তার মেয়ে পুলিশে চাকুরী পেয়েছে।ঘুষ ছাড়াই যে পুলিশে চাকুরী হয়-তা তিনি কখনোই ভাবেননি।তবে তিনি মেন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, পুলিশ এসে যখন তার মেয়ের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানান তখন তিনি তাদের চা-পানিও খাওয়াতে পারেননি-কি পোড়া কপাল আমার! প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক মাঠ পরীক্ষায় প্রায় ৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৫০৩ জন। এখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১৮৩ জন। সর্বশেষ চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৯ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী মোট ৩৮ পরীক্ষার্থী পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পায়। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মোহা. মনিরুজ্জামান (পিপিএম-সেবা) এর সভাপতিত্বে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোহাম্মদ নাইমুল হাসান এবং নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান নিয়ে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ কমিটি এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়াও পুলিশ হেড কোয়ার্টার হতে আগত দুই সদস্য নিয়োগ পরীক্ষার স্বচ্ছতা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন।